আমানতে সর্বনিম্ন সুদ অক্টোবরে
২৮ নভেম্বর, ২০২১, 11:06 AM

NL24 News
২৮ নভেম্বর, ২০২১, 11:06 AM

আমানতে সর্বনিম্ন সুদ অক্টোবরে
আমানতের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেওয়ার পরও গত অক্টোবরে এ খাতের সুদহার ছিল এখন পর্যন্ত সবনিম্ন। ওই মাসে দেশের ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ০১ শতাংশ। এর আগে কোনো মাসে আমানতে এত কম সুদহার দেখা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে কখনই আমানতের ওপর এত কম সুদহারের নজির পাওয়া যায়নি। ২০১১ সালের অক্টোবরে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এর আগে আমানতে সর্বনিম্ন সুদহার ছিল গত আগস্টে। ওই মাসে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে আমানতের গড় সুদহার কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ হলেও অক্টোবরে তা আরও কমে একেবারে তলানিতে নেমে আসে। আমানতের সুদহার এভাবে কমতে থাকায় গত ৮ আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার দিয়ে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়, ব্যক্তিপর্যায়ের মেয়াদি আমানত, বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভবিষ্যৎ তহবিল, অবসরোত্তর পাওনাসহ বিবিধ পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত তহবিল বাবদ রক্ষিত যেকোনো পরিমাণ আমানতের ওপর সুদ বা মুনাফার হার মূল্যস্ফীতির হার অপেক্ষা কোনোক্রমেই কম হবে না। কোনো নির্দিষ্ট মাসে সুদ বা মুনাফার হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই মাসের তিন মাস আগের মূল্যস্ফীতির হারকে বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১২ মাসভিত্তিক গড় মূল্যস্ফীতির হার অনুযায়ী আমানতের সুদহার নির্ধারণ করতে বলা হয়। সার্কুলার জারির পর থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করতে ব্যাংকগুলোকে বলা হলেও আগস্ট মাস শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে আমানতের সুদহার কিছুটা বাড়লেও অক্টোবরে তা আবার কমে এসেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, তারা মেয়াদি আমানতে সুদহার বাড়িয়েছেন। তবে চলতি আমানতের সুদ একেবারে তলানিতে। যে কারণে গড় সুদহার এখনো মূল্যস্ফীতির অনেক নিচে রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংক মেয়াদি আমানতে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করেছে। অন্যদিকে চলতি আমানতে ব্যাংকটির সুদ ছিল মাত্র ২ শতাংশ। অন্যান্য ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এর কাছাকাছি সুদহার অফার করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্টে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে গত মে মাসে আমানতের গড় সুদ ছিল ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। জুন মাসে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং জুলাই মাসে ছিল ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর গত অক্টোবরে আমানতের গড় সুদহার কমেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদহার ছিল ডাচ-বাংলায়, ১.৭২ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে এই ব্যাংকটির গড় সুদহার ছিল ১.৭১ শতাংশ। অক্টোবরে ব্র্যাংক ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহার ছিল ২.৩০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির গড় সুদহার ছিল ২.২০ শতাংশ। অক্টোবরে প্রাইম ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার ছিল ২.৭৬ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ২.৬৬ শতাংশ। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে গত অক্টোবরে আমানতের গড় সুদহার বেড়ে ৩.৮৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির সুদহার ছিল ৩.৪৮ শতাংশ। ইস্টার্ন ব্যাংকে গত অক্টোবরে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৩.০৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ২.৮৮ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত অক্টোবরে সবচেয়ে কম সুদহার ছিল সোনালী ব্যাংকের। এই ব্যাংকটির আমানতের গড় সুদহার ছিল ৩.৩১ শতাংশ, গত সেপ্টেম্বরে এই সুদহার ছিল ৩.৩৫ শতাংশ। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে দেশের ব্যাংকগুলো মেয়াদি আমানতের সুদ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনে। চলতি আমানতে ব্যাংকগুলো সুদ দিচ্ছে আরও কম। ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনায় আমানতের সুদ কমিয়ে আনার দেড় বছর পার হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে ঋণপ্রবাহ সেভাবে না বাড়লেও আমানতের সুদহার একেবারে তলানিতে নেমেছে। এদিকে আমানতের এই পড়তি সুদহারের সময়ও সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১৫ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকারীরা আগের থেকে ১ থেকে ২ শতাংশীয় মাত্রায় কম মুনাফা পাবেন। তবে এরপরও ৯ শতাংশের বেশি মুনাফা রয়েছে সঞ্চয়পত্রে। যেখানে ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহার ৪ শতাংশে নামায় গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সার্কুলারে উল্লেখ করে, ব্যাংকে রক্ষিত আমানতের ওপর মূল্যস্ফীতি হারের কম হারে সুদ দেওয়ায় আমানতকারীদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে আমানতকারীদের সঞ্চয় প্রবণতা কমে যাচ্ছে এবং তাদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ খাতসহ বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ প্রবণতা বাড়ছে। তবে এতকিছুর পরও ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। এ সংক্রান্ত সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়ে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এর আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। আলোচিত এক বছরে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ।সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন