আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ নভেম্বর, ২০২১, 10:32 AM

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ নভেম্বর, ২০২১, 10:32 AM

আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম
আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে একদিনেই মানভেদে প্রতি কেজি চালে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ দেশের ধান-চালের বড় বড় মোকাম ও হাটবাজারগুলোতে এখন নতুন আমন ধানের ব্যাপক সরবরাহ। প্রতিদিনই হাট-বাজারগুলোতে ধান-চালের এ সরবরাহ বাড়ছে। তাহলে চালের দাম বাড়ছে কেন? ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়েছে।
আগে মোকাম থেকে চাল আনতে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন তা নেওয়া হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা। এই বাড়তি ভাড়া চালের দামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া ধানের দাম বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। এর প্রভাব পড়েছে চালের দামের ওপর। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশে করোনার মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আবার করোনার চতুর্থ ঢেউ আসতে পারে। তাই একটি চক্র আগেভাগেই ব্যাপকভাবে ধান-চাল মজুদ করছে। এর প্রভাবে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম/লতা ৫১ থেকে ৫৬ টাকা ও ইরি/স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ একদিন আগে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম/লতা ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা ও ইরি/স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের নিত্যপ্রণ্যের বাজারদরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার এ তথ্য জানিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর দেশে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। আশা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
আমাদের রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা দীপক কুমার কর জানান, রায়গঞ্জের প্রায় ৩৫ শতাংশ আমন কাটা হয়েছে। প্রতিদিনই এখানকার হাটবাজারগুলোতে ধান-চালের সরবরাহ বাড়ছে। তবে দাম বেশি। উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক নাজমুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ২২ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। এরমধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। ফলন হয়েছে ভালো, দামও বেশ ভালো। চান্দাইকোনা বাজারের ধান-চাল ব্যবসায়ী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, হাটবাজারগুলোতে এখন প্রতি মণ কাঁচাভেজা কাটারিভোগ ধান ১২৮০ থেকে ১৩২০ টাকা, কাটারিভোগ শুকানো ধান ১৩৬০ থেকে ১৩৭০ টাকা , ব্রিধান-৪৯ শুকনা ১০৫০ থেকে ১০৭০ টাকা, ব্রিধান- ৫১ শুকনা ১০০০ থেকে ১০২০ টাকা ও স্বর্ণা-৫ শুকনা ১০৩০ থেকে ১০৫০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।
মৌসুমেও চালের দাম বেশি কেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একদিকে ধানের দাম বেশি অপরদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এসব কারণে চালের দাম বেশি। এছাড়া বড় জোতদার ও বড় ব্যবসায়ীরা আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় ধান-চাল মজুত করছে বলে জানান তিনি। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। কেউ কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরেই চালের দর বাড়তি। চলতি বছর আগস্টে চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। পাশাপাশি পণ্যটি আমদানিতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছিল গত অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও বাজারে চালের দাম কমেনি।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এরমধ্যে চাল ১২ দশমিক ৩২ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৭৬ লাখ টন। ফলে দেশে ধান-চালের কোন সংকট নেই। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আমন সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বর্তমানে সরকারের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তায় এই মজুদ বৃদ্ধি করতে সরকার সচেষ্ট। তিনি বলেন, কেউ যেন অবৈধ মজুদ করে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কোন কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক